মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :
কক্সবাজার ডিসি সাহেবের বলি খেলায় মহিলা ইভেন্টে জাতীয় কুস্তি টিমের খেলোয়াড় প্রীতি রায় চ্যাম্পিয়ান হয়েছেন। শনিবার ৭ মে বিকেলে কক্সবাজার বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সেনাবাহিনীর সুদর্শনা প্রীতি রায় বাংলাদেশ আনসার এর ফাতেমা আকতার-কে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ান হওয়ার গৌরব অর্জন করে।
বিজয়ী প্রীতি রায় দেশের বিভিন্ন মাঠে ছাড়াও সাফ গেমমস, নেপাল সহ বিভিন্ন দেশে জাতীয় টিমের হয়ে আন্তর্জাতিক কুস্তি খেলায় লড়ছেন। তবে কক্সবাজার বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়ামে এটা তার প্রথম খেলা।
শুক্রবার ৬ মে শুরু হওয়া ২ দিন ব্যাপী ডিসি সাহেবের বলী খেলার অন্যতম আকর্ষন ছিলো জাতীয় কুস্তি টিমের এ ২ জন যুবতী নারী বলী। নারী বলী ফাতেমা এবং প্রীতি রায় দর্শকদের শুভেচ্ছা জানাতে হাত উঁচিয়ে স্টেডিয়ামের চতুর্পাশে রাউন্ড দেওয়ার সময় উৎসুক দর্শকেরা আনন্দে মেতে উঠেন। বলী খেলা চলাকালে এ ২ জন যুবতী বলীর প্রতি দর্শকদের দৃষ্টি ও তাদের বলী খেলা দেখার জন্য উদগ্রীব ছিলেন বেশী। প্রমীলা কুস্তীগির প্রীতি রায় ও ফাতেমা রায়ের খেলা দেখতে স্টেডিয়ামে দর্শকদের মাঝে বেশ কৌতুহল লক্ষ্য করা গেছে।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মোঃ জসিম উদ্দিন জানান, ডিসি সাহেবের বিগত বলী খেলাতেও নারী বলী অংশ নিয়েছিলেন।
তবে পুরুষ ইভেন্টে এবার কেউ একক চ্যাম্পিয়ন না হওয়ায় হতাশ হয়েছে দর্শকরা। শনিবার তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ খেলায় পুরুষ ইভেন্টে যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন, উখিয়ার নুর মোহাম্মদ বলী ও বাংলাদেশ কুস্তি ফেডারেশনের লিটন বিশ্বাস। এর আগে সেমিফাইনালে উখিয়ার নুর মোহাম্মদ বলীর কাছে পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে মাঠ ছাড়েন চট্টগ্রামের জব্বারের বলী খেলার চ্যাম্পিয়ন চকরিয়ার তারেকুর রহমান জীবন বলী।
২নং মেডেলেও একইভাবে যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মহেশখালীর মোহাম্মদ হোসেন ও কুস্তি ফেডারেশনের আনোয়ার। ৩নং মেডেলে মহেশখালীর সরওয়ারকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ান হয়েছে, একই উপজেলার সাহাব উদ্দিন।
পরে বিজয়ী ও বিজিতদের মাঝে নগদ অর্থ ও ট্রফি তুলে দেন জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ। এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এড. ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাহিদ ইকবাল, কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের সভাপতি আবু তাহের চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল খালেক, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ সভাপতি অধ্যক্ষ জসিম উদ্দিন, সহ সভাপতি অনুপ বড়ুয়া অপু, বলী খেলা উপ কমিটির সদস্য সচিব আলী রেজা তসলিম, এম আর মাহবুব, জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তা হারুনর রশীদ, সহ সাধারণ সম্পাদক শাহীনুল হক মার্শাল, শরাফত উল্লাহ বাবুল, প্রভাষক জসিম উদ্দিন, আজমল হুদা, রতন দাশ, শোয়েব ইফতেখার, রিয়াদ ইফতেখার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সমাপনী দিনের খেলা উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। তিনি বলেছেন, জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যবাহী এই বলী খেলা হারিয়ে যেতে বসেছে। তাই বলী খেলাকে ধরে রাখতে সরকারীভাবে পৃষ্ঠপোষকতা সহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হবে।
দুপুর থেকে ঢোল ও নানা বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে বিভিন্ন এলাকা থেকে স্টেডিয়ামে আসতে থাকে মানুষ। দর্শকদের তুমুল হর্ষধ্বনির মধ্য দিয়ে জমজমাট হয়ে উঠে ডিসি সাহেবের ৬৭ তম বলীখেলা। বিকাল গড়ানোর সাথে সাথে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয় দর্শক গ্যালারী। এবারের বলীখেলায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রায় সাড়ে ৩০০ বলী অংশ নিয়েছেন বলে জানান, ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মোঃ জসিম উদ্দিন।
বলী খেলার পাশাপাশি স্টেডিয়ামের চতুর্পাশে শুক্রবার সকাল থেকে কক্সবাজারের লোকজ ও গ্রামীন পণ্যের মেলা জমেছিল বেশ।
কক্সবাজারের ইতিহাস, ঐতিহ্যের এক অনন্য অংশ ডিসি সাহেবের বলী খেলা। ১৯৫৬ সালে কক্সবাজার মহকুমা থাকাবস্থায় “এসডিও সাহেবের বলী খেলা” নামে এ খেলার প্রবর্তন হয়। ১৯৮৪ সালে কক্সবাজার মহকুমা থেকে জেলায় রুপান্তর হওয়ার পর “এসডিও সাহেবের বলী খেলা” থেকে “ডিসি সাহেবের বলী খেলা” নামকরণ করা হয়। এ বছরের বলী খেলা ছিল ৬৭ তম আসর।
(ছবি : জাবেদ উল্লাহ মিয়া ভাই)
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।